রাজশাহীতে বঞ্চিত মৎস্যজীবীরা, প্রভাবশালীদের কব্জায় খাস পুকুর

রাজশাহীতে বঞ্চিত মৎস্যজীবীরা, প্রভাবশালীদের কব্জায় খাস পুকুর

রাজশাহীতে বঞ্চিত মৎস্যজীবীরা, প্রভাবশালীদের কব্জায় খাস পুকুর
রাজশাহীতে বঞ্চিত মৎস্যজীবীরা, প্রভাবশালীদের কব্জায় খাস পুকুর

এহেসান হাবিব: রাজশাহী অঞ্চলের হাজারো খাস পুকুর সরকারীভাবে লীজ দিলেও ক্রমেই সেগুলোর সত্ত্ব হারাচ্ছে সরকার। ফলে এক শ্রেণির প্রভাবশালীদের হাতে চলে যাচ্ছে এসব খাস পুকুরের দখলদারিত্ব। এতে স্থানীয়রা কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। প্রকৃত মৎস্যজীবী ও কৃষকরাও এসব পুকুরের সুফল পাচ্ছেন না। দুর্যোগকালীন এসব পুকুরের পানি কৃষকদের সেচের জন্য প্রদানের বিধান থাকলেও কৃষকরা তাদের ফসল বাঁচাতে নূন্যতম সেচ সুবিধাও পাচ্ছে না।

মাছ চাষে জড়িতরা মাছের ক্ষতির অজুহাতে কৃষকদের পানি দিচ্ছে না। ফলে কৃষকদের ফসল বাঁচাতে দুরের কোনো সেচ পাম্প থেকে উচ্চদরে পানি কিনে ফসল বাঁচাতে হচ্ছে। এতে সময় ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা। আর এসব সরকারি খাস পুকুর ইজারা পাবার যোগ্য প্রকৃত রেজিষ্ট্রার্ডভূক্ত মৎস্যবীবীরা কিন্তু কোনোভাবেই তারা পাচ্ছে না পুকুরের লীজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ভূমি অফিস থেকে এসব পুকুর টেন্ডারের মাধ্যমে ভূয়া মৎস্যজীবী সমিতির নামে লীজ নিয়ে তা আবার বিক্রিও করে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে একদিকে যেমন কৃষক ও মৎস্যজীবীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন অন্যদিনে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছেন। প্রভাবশালীরা বিভিন্ন ভূয়া মৎস্যজীবীর নামে এসব পুকুর নাম মাত্র মূল্যে ইজারা নিচ্ছেন। কিন্তু তারা মাছ চাষ না করে এসব পুকুর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার তৈল মেজার একজন কৃষক ইস্রাফিল হোসেন বলেন, সরকারি খাস পুকুরের পাশেই তার আবাদি জমি। সেখান থেকে সেচ পাম্প অনেক দুরে। তার ধান কেবল থোড় অবস্থায়। এই মুহূর্তে সেচ দরকার তার। কিন্ত তিনি কোনো মতেই খাস পুকুর থেকে সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না। তার মত তানোর উপজেলার অনেক কৃষক খাস পুকুর থেকে সেচ পাচ্ছেন না। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে দূরের সেচপাম্প থেকে উচ্চ দরে পানি কিনে কোনোমতে ফসল বাঁচাচ্ছেন। আর সেচ না পেয়ে প্রান্তিক চাষিদের ফসল হুমকির মুখে পড়েছে। এ নিয়ে কৃষক ইস্রাফিল সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর উপজেলায় অন্তত ৯০০টিরও বেশী খাস পুকুর রয়েছে। এসব পুকুর প্রকৃত মৎস্যজীবীরা লীজ পাওয়ার যোগ্য। তবে তাদের বাদ দিয়ে নামে বে-নামে গড়ে উঠেছে প্রভাবশালীদের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি নামের ভূয়া সমিতি। এসব সমিতির নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

তানোর উপজেলার একাধিক মৎস্যজীবী জানান, উপজেলায় এখন প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে নাম-বেনামে অসংখ্য মৎস্যজীবী সমিতি। এসব সমিতিতে কোনো মৎস্যজীবী নাই। অথচ তারায় প্রভাব খাটিয়ে এসব পুকুর লিজ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের কাছে পুকুর রি-লীজ প্রথা চালু করে ফায়দা লুটছেন। শুধু তানোর উপজেলা নয়, জেলার বাগমারা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী ও পবা উপজেলায় একইভাবে হাজারো খাস পুকুর বে-নামে লিজ নিয়ে প্রভাবশালীরা দখল করে অন্যদের বিক্রি করছেন। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, খাস পুকুর ইজারার কোনো নীতিমালা মানা হচ্ছে না কোনো উপজেলায়। তিনি বলেন, তানোর রেজিষ্ট্রার্ড তিন থেকে চারটি মৎস্যজীবী সমিতি রয়েছে। তারা অনেক সময় পুকুর লিজে অংশ নিলেও তা পায় না। বাইরের উপজেলার মৎস্যজীবীদের লাইসেন্স ব্যবহার করে একই নামে প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে দুটি করে পুকুর লীজ নিচ্ছেন। ফলে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। জলমহাল লিজ সিস্টেমে মন্ত্রণায়য়ের কোনো আদেশই মানা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা বলে তানোর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত বলেন, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। আগে নিশ্চয় বিধি মেনেই পুকুর ইজারা দেওয়া হয়ছে। আগামীতে যথাযথ বিধি অনুসরণ করে এসব খাস পুকুর লিজ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply